News update
  • Khaleda Gets Eternal Farewell from Over a Million of Hearts     |     
  • Sea of Mourners Gathers to Pay Tribute to Khaleda Zia     |     
  • State mourning begins, state funeral for Khaleda Zia at 2 pm     |     
  • Kamal Hossain: Khaleda Zia was ‘a patriot and democratic guardian'     |     

বিদায় আপসহীন নেত্রী 

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রাজনীতি 2025-12-31, 8:22pm

tryeyertert-ac56002cb1de2a069da3dc94b2b28b431767190979.jpg




সময়ের দাবিতে ঘর ছেড়ে এলেন রাজপথে। আপসকে দূরে টেলে দিয়ে বেছে নিলেন সংগ্রাম। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর জনসমাবেশ ছড়িয়ে দিলেন সারাদেশে। তারপর জনতার রায়ে গেলেন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পাশে সংসদ ভবনে। সেখানে থেকে বিশ্ব দরবারে নিজেকে চেনানোর লড়াই। সরকার ছেড়ে বিরোধী দল, বিরোধী দল থেকে আবার সরকারে।

তারপর ষড়যন্ত্র, এক-এগারো। আশির দশকের সংগ্রাম আবার শুরু... পথ চলায় হারালেন বাড়ি-ঘর, ছোট ছেলেকে।

কারাগারে গিয়ে ধীরে ধীরে শরীরে দানা বাঁধতে শুরু করলো রোগ। কিন্তু তার যে আপসহীন ভূমিকা, মাথা নোয়াবার নয়! তাই তো নিজের পথে ছিলেন অবিচল, করেননি আপস। আর চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।

তবে শরীর যে মানে না! লড়াই চালিয়ে যান নিজের সাথে। পরিবার, দল সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সুস্থ করে তোলার। চলতি বছরের একদম শুরুতেই গেলেন বিলেতে। চিকিৎসা নিয়ে সেখানে থাকতে পারতেন পরিবারের সান্নিধ্যে। কিন্তু দেশকেই বেছে নিলেন। একাই থাকবেন, তবুও দেশের মাটিতে।

দেশে ফেরার পথে হিথ্রো বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের বলেছিলেন, বারবার বলছিলেন, ছেলে তারেক রহমানকে দেখে রাখতে। যেন তিনি বুঝতে পারছিলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে, নিজে আর ছেলেকে আগলে রাখতে পারবেন না। দলের নেতাকর্মীদেরকেই দিলেন প্রাণপ্রিয় ছেলেকে দেখে রাখার সেই দায়িত্ব। এরপর ফিরলেন দেশে। কারণ, তিনি তো জাতিকে বলেছিলেন, আমি দেশ ছেড়ে, দেশের মানুষকে ছেড়ে কোথাও যাব না। এই দেশই আমার একমাত্র ঠিকানা। দেশের বাইরে আমার কিছু নেই, কোনো ঠিকানাও নেই।

এক-এগারো থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খালেদা জিয়া তার কথা রেখেছেন। এমনকি দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হওয়ার পরেও। সুযোগ ছিল বিদেশে গিয়ে জীবন কাটানোর, কিন্তু সেই পথ বেছে নেননি। গোটা দেশ দেখলো তা। জাতিও বিনিময়ে ভালোবাসা দিতে ভোলেননি।

খালেদা জিয়াকে শেষ বিদায় জানাতে সারাদেশ থেকে ছুটে আসে মানুষ। সংসদ ভবন এলাকা পেরিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে শাহবাগ-বিজয় সরণি-আগারগাঁও-শ্যামলী-নিউমার্কেট এলাকা পৌঁছে যায় জনতার স্রোত। জানাজাস্থল থেকে যতদূর চোখ যায়, দেখা মেলে মানুষ আর মানুষ।

জীবনের শেষ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠা খালেদা জিয়া যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপাসনের পরিচয় ছাপিয়ে গেছেন, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় এই জনস্রোত। একজন রাজনীতিবিদের জীবন কতটা বর্ণাঢ্য হলে এতটা ভালোবাসা মেলে, তার উত্তর এই উপস্থিত মানুষের মাঝেই রয়েছে। তাদের অনেকেরই চোখ ছিল অশ্রুসজল। 

বাংলাদেশের নেতা খালেদা জিয়াকে স্বয়ং প্রকৃতিও বিদায় জানিয়েছে। গেলো কয়েকদিনের কনকনে ঠান্ডা দূর করে মিষ্টি রোদ ওঠে নগরীতে। তাতে কিছুটা স্বস্তি পায় আগত জনতা।

জনতার এই স্রোত থামেনি দুপুর ২টায়ও, যে সময় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে জানাজা শুরু হতে বিলম্বও হয় কিছুটা। ঘড়ির কাটায় যখন ২টা ৪৫ মিনিট, জানাজাস্থলে খালেদা জিয়ার কফিন পৌঁছায়। কফিনজুড়ে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। তার আগে হাসপাতাল থেকে গুলশানে তারেক রহমানের বাসা, সেখান থেকে সংসদ ভবন এলাকায় রাষ্ট্রীয় প্রোটকলে লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে তার মরদেহ আনা হয়।

কফিন পৌঁছার পর দলের পক্ষ থেকে শুরুতে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের গল্প তুলে ধরেন তিনি।

এরপর ২টা ৫৮ মিনিটে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলেন তারেক রহমান। মা হারানো তারেক স্বাভাবিকভাবেই ছিলেন আবেগাপ্লুত, শোকে মূহ্যমান। তিনি কোনও ধরনের ভূমিকায় যাননি বক্তৃতায়। স্বজন হারিয়ে বাংলার আট-দশটি সাধারণ পরিবারের সন্তানের মতোই শোনা গেলো তার কণ্ঠ। আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘আমি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান। এখানে উপস্থিত সকল ভাই ও বোনেরা, মরহুমা যদি কারও কাছ থেকে কোনও ঋণ নিয়ে থাকেন, তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, আমি পরিশোধ করব ইনশাআল্লাহ।খালেদা জিয়া জীবিত থাকাকালীন তার কোনও ব্যবহারে অথবা কোনও কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তার জন্য দোয়া করবেন।’

এরপর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেকের ইমামতিতে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। লাখ-লাখ মানুষের এই জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শোক জানানোর পাশাপাশি শোকার্ত পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে ঢাকায় ছুটে আসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজিতা হেরাথ, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি এন ধুংগেল এবং মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ মুইজ্জুর বিশেষ দূত ও দেশটির উচ্চশিক্ষা, শ্রম ও দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ড. আলী হায়দার আহমেদ।

দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের উপস্থিতিই বলে দেয়, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপিরই নেত্রী নন, এই জাতি-রাষ্ট্রেরই নেতা।

জানাজা শেষে খালেদা জিয়ার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জিয়া উদ্যানে। সেখানে স্বামী জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এরপর তোপধ্বনির মাধ্যমে গান স্যালুট প্রদর্শন করে জানানো হয় সম্মাননা। সরকার, তিন বাহিনীর প্রধানরাও শ্রদ্ধা জানান তাকে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সমাধিস্থলে মানুষের উপস্থিতি ছিল সীমিত। তবে, বাইরে অনেক মানুষ অপেক্ষা করছিলেন ফেরার সময় কবর জেয়ারত করে যেতে। বাংলার এই মানুষ বলে দিচ্ছেন খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাদের মানসপটে। তিনি থাকবেন বাংলার ধানের শীষে মিশে। যেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা, রাজনৈতিক সংগ্রামের গল্প, দেশ বাঁচাও-মানুষ বাঁচাওয়ের স্লোগান।

গত মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বেনজির ভুট্টোর পর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।